বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগের ফার্স্টবয়ের প্রোপোজ ফিরিয়ে দিয়েছেন!


টাইমস অনলাইনঃ | Published: 2017-12-20 21:24:43 BdST | Updated: 2024-05-20 19:08:04 BdST

এই যে নিন বমি বন্ধের টেবলেট, এটা গ্যাসের টেবলেট আর এটা পানির বোতল আর এই যে তেতুল চকলেট।
-আপনাকে পানি, চকলেট, টেবলেট এগুলো আনতে বলছে কে? আমার পলিথিন কই?
-ও সামনে আছে আমি এনে দিচ্ছি,
-দুষ্টু পোলার এগুলো আনা দেখে খুব আমার বাবা মার কথা মনে পড়ছে, এখন বাবা মা সাথে থাকলে আমার জন্য এগুলোই করতো, এরকম করে একটা একটা করে বুঝিয়ে দিতো।
-এইই নিরা দুষ্টু পোলার নাম কিরে??
-তুই এই ভাইয়ার নাম জানিস না?? এটা তো সামির ভাইয়া। সামির ভাইকে সব স্যারেরা খুব ভালবাসে, ডিপার্টমেন্ট ফাস্ট খুব ট্যালেন্ট ইস্টুডেন্ট।

-এই যে নিন আপনার পলিথিন,
-ওকে ধন্যবাদ,
-ধন্যবাদ দিয়ে দিতে হবে না একদিন আপনি বোতল দিয়ে হেল্প করেছেন আজ আমি হেল্প করলাম কাটাকাটি হয়ে গেলো।এর পর থেকে কেউ হেল্প করলে তখন ধন্যবাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাবো। ওকে অনেক কথা বললাম, তারাতারি খেয়ে নেন শোনেন আপনি বমি করলে অন্যদের সমস্যা হবে অন্যদের কথা চিন্তা করে আপনি ওষুধগুলো খেয়ে নিন।

-বর্ষা তুই ওষুধগুলো খেয়ে নে সামির ভাইয়া ঠিকই বলছে,
-আসলে ছেলেটা দুষ্টু হলেও দায়িত্বশীল আছে তা না হলে বাস থামিয়ে এগুলো কেউ কিনে আনতোনা। বাসের ভিতরে অনেক হুইহুল্লা হচ্ছে সেখানে উপস্থাপনা করছে সামির। বাহ সবাই কে খুব মজা দিচ্ছে সবাই হেসে যাচ্ছে। সবাইতো সামিরের প্রসংশায় পঞ্চমুখ।
-সামির ছেলেটার সাথে প্রথম দেখা একটু অন্য
রকম ছিলো, সেই প্রথম দিন...

একটু পানির বোতল টা দেওয়া যাবে? হটাৎ একটা ছেলে এসে এরকম বলাতে আমি আর
নিরা দুজনই তাকাই,
-আমি সরাসরি বললাম, না দেওয়া যাবেনা। আমার কথা শুনে ছেলেটার চোখে মুখে আশ্চর্য হওয়ার ছাপ দেখতে পেলাম হয়তো সরাসরি " না " আশা করেনি। নিরা বলে, বর্ষা বোতলটা দে বড় ভাইয়াটা পানি খাবে,
-না আমার বোতল আমি দিতে পারবোনা সেদিন একটা ছেলে পানি খেতে চাইলো তাই দিলাম, দেখি মুখ লাগিয়ে খাচ্ছে তাই রেগেমেগে বোতলটাই ফেলে দিলাম। রোজ রোজ আমি এতো পানির বোতল কিনতে পারবোনা তার থেকে দুটো ডিম কিনে খেলে ভাল হবে।

-বর্ষা তুই বড় ভাইয়াকে এভাবে সরাসরি না বললি? এটা কিন্তু আমাদের ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই হয়।
-তো! ডিপার্টমেন্ট বড় ভাই হয়েছে তাতে কি হয়েছে? তাকে আমার হুজুর হুজুর করতে হবে নাকি? এতে তোর কি হয়েছে? তোর মায়া লাগলে দোকান থেকে একটা পানির বোতল কিনে দে।
-দেখ বর্ষা বোতলেতো শুধু পানি খেতে চেয়েছে!
-নিরা বুঝতে পেরেছি তোর মায়া লাগছে এই নে বোতল টা দিয়ে আয়।
-ছেলেটা এতো সময় টিউবওয়েলে যেয়ে হাত দিয়ে পানি খাওয়ার চেষ্টা করছে আসলে এখান থেকে দোকান অনেক টা দূরে তাই হয়তো বেশি পিপাসার কারণে এখানেই পানি খাওয়ার চেষ্টা করছে।
-নিরা যেয়ে বোতলটা দেয়।
-ছেলেটা বোতল নিয়ে আমার দিকে তাকায়। ছেলেটির মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব অপমাণিত হয়েছে সেরকম একটা ভাব মুখে ফুটে উঠেছে চোখে মুখে রাগ রাগ ভাব নিয়ে আছে। বোতলে পানি ভরে নিয়ে এসে আমার সামনে বোতলের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি খাচ্ছে।

-নিরা আমি দুজনই হা করে তাকিয়ে আছি, কি করে ছেলেটা! এতো কথা শোনার পরও মুখ লাগিয়ে খাচ্ছে! কি আতেঁল মার্কা ছেলে টা? আমার হা করা অবস্থায়ই আমার হাতে বোতল ধরিয়ে দিয়ে মুখে দুষ্টামির হাসি দিয়ে ছেলেটা চলে যাচ্ছে।

এবার রাগে মেজাজ গরম হয়ে যায়। ছেলেটা ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন করলো। বোতলটি নিরার গায়ের উপরে ঢিল দিয়ে হাঁটা শুর করি। একটু হেঁটে পিছনে ফিরে তাকিয়ে বললাম শোন কাল ক্যাম্পাসে এসে যেনো তোর হাতে নতুন বোতল দেখতে পাই।

আম্মু আজ একটু বেশী করে টাকা দিও।
-কেন বেশী টাকা দিয়ে কি করবি?
-আজ আমি আর নিরা রেস্টুরেন্টে যাবো।
-শোন তোর কি খেতে ইচ্ছে করছে বল আমি রান্না করে দেবো তুই নিরাকে নিয়ে বাসায় আয়।
-মেজাজটাই খারাপ হয় এই মা-টা এতো কিপটা হয়েছে যে! এতো ধন সম্পদ কে খাবে! আমিইতো একা তবুও ভার্সিটিতে যাওয়া আসা খরচ দিয়ে প্রতিদিন গুণে গুণে ষাট টাকা দেয়। কোন দিন টাকা দিতে দশটাকা বেশী হয়না কমও হয় না। আম্মু যে হিসাবে খুব পাকা তা এই কয় বছরে বুঝে গেছি। আমার বাবাটা খুব ভাল যখন যা চাই তখন তাই দেয় এজন্য
মায়ের কাছে বাবা কম বকা শুনেনি। আম্মু বাবাকে সব সময় সেই ঐশির উধাহরণ দেয়! যে মেয়ে নিজে বাবা মাকে খুন করেছে। মায়ের এক কথা সন্তানকে বেশী টাকা পয়সা দিলে নাকি খারাপ পথে চলে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে। তাইতো যথেষ্ট পরিমাণ টাকা থাকা সত্ত্বেও আমাকে হিসাব করে টাকা দেয়। অন্য সময় অবশ্যই মাকে না জানিয়ে বড় অংকের টাকা বাবার কাছ থেকে নিয়ে নেই।

যাক শেষে ষাট টাকা নিয়েই বাসা থেকে বের হলাম চল্লিশ টাকা রিক্সা ভাড়া আর বিশ টাকা ফুচকা খাওয়া জন্য। এই চল্লিশ আর বিশ দিয়ে মোট ষাট টাকা প্রতিদিন আমি পাই।

ক্যাম্পাসে এসে দেখি নিরা পানির বোতল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর হাতে বোতল দেখে গতকালের কথা মনে পড়লো। মনে মনে হাসলাম নিরা আমাকে দেখে ভয় পায়। আবার খুব ভালবাসে আমায়। তাইতো আজ আমি রাগারাগি করবো এই ভয়ে নিরা আগেই কিনে নিয়ে এসেছে। ও আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী, আমার ভাল লাগা, খারাপ লাগা সব বুঝে সুন্দর ভাবে। মাঝেমধ্যে ওকে আমার আপন বোনের মতই লাগে।

চটপটির গাড়ির পাশে দাড়িয়ে আছি চটপটি খাওয়ার জন্য। কিন্তু একটু লোকের ভীড় পড়েছে সিরিয়াল মেইনটেইনের জন্য একটু অপেক্ষা করছি, এমন সময় কোথায় থেকে যেনো তিনজন এসে বলছে মামা আমাদের তিনজনকে আগে দিন। ভাল করে তাকিয়ে দেখি কালকের সেই বান্দর পোলা।
-এই যে মামা আমরা আগে এসেছি আমাদের আগে দিন।
-না মামা আমাদের তিনজনকে আগে দিন।
-চটপটি মামা আমাদের আগে না দিলে কিন্তু আমারা চলে যাবো।
-মামা যেতে দিন ওই দুজনের টাকা আমরা বেশী করে দেবো তবুও আমাদের আগে দিন।
-এইবার রাগ চরম পর্যায়ে চলে গেলো এই ছেলেটা নিজেকে পেয়েছে কি? আমি কিছু
বলতে যাবো ওমনি নিরা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে এসে বলে, শোন! তুইতো এদের চিনিস না! এরা ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই এদের সাথে বেয়াদবি করিস না । তুই তো মাত্র কয়দিন সেকেন্ড ইয়ারে ক্লাস শুরু করেছিস। ফাস্ট ইয়ারেতো ক্লাস করিসনি তাই এদের চিনিস না।
-শোন নিরা! তুই না একটু বেশী ভাল। আমিতো তোর মত এতো ভাল না তাই ওই বান্দর পোলাদের বড় ভাইয়ের সম্মান দিতে পারবোনা।
- বর্ষা এখন চল চটপটি খেয়ে আসি ওনাদের দেওয়া হয়ে গিয়েছে।
-না আমি এখন আর চটপটি খাবো না বলেছি তাহলে খাবোইনা।
-তাহলে চল আজ ঝালমুড়ি খাই?
-ঠিক আছে চল।
-এরপর থেকে প্রায়ই বান্দর পোলাটা তাকিয়ে থাকতো, কখনো সামনা সামনি পড়ে যেতাম।
আবার কখনো বা ক্লাস রুম থেকে চোখাচোখি হয়ে যেতো। নিরা এসে বলে
-বর্ষা ডিপার্টমেন্ট থেকে টুরে যাচ্ছে তুই যাবি!
-তাই নাকি? যেতেতো মন চাচ্ছে আগে রাহেলা বেগম (মা) আর আরিফ হোসাইন (বাবা) কে রাজি করাতে হবে।
-ঠিক আছে তুই আন্টি আংকেলকে রাজি করা আমি বাসায় মা বাবাকে রাজি করাই।
-ঠিক আছে।
-অনেক কষ্টে অনেক রকম সুইসাইড এর ভয় দেখিয়ে বাবা মাকে রাজি করাতে সক্ষম হই। তাদের এক কথা তোর বেড়াতে ইচ্ছে করছে আমরা নিয়ে বেড়িয়ে আসবো তবুও ডিপার্টমেন্ট থেকে যেতে হবে না। আর গেলেও আমরা সাথে যাবো। হুহ! তাদের সাথে গেলেতো কোন মজাই পাবোনা সব সময় শাসন করবে এটা করবানা, বেশী পানিতে নামবা না, ওটা করবানা। তারা মনে করে আমি এখন শিশু রয়ে গেছি। আমি যে বড় হয়েছি সব কিছু নিজে বুঝি তা তারা মানতেই চায়না। আমার ডিসিশন মেনে না নিয়ে তাদের ডিসিশন আমার
উপরে চাপিয়ে দিতে চায়।

যেদিন পিকনিকে যাই সেদিন মা, বাবা এসে স্যারদের একশো একটা সতর্কবার্তা দিয়েছে আমার ব্যপারে। বাবা মার এতো সতর্কবার্তা দেখে স্যারদের বিরক্তির ভাব ফুটে উঠলো। আসলেই যে মেয়ে ভার্সিটিতে পড়ে সেই মেয়ের ব্যাপারে মা, বাবা এতো সতর্কতা দেখলে একটু রাগ করারই কথা। বাসে উঠে বসার পরে দেখি ওই বান্দর পোলা আমাদের সিটের অপসিটে বসেছে। আমি এদের চোখের সামনে বসবো না ভেবে সব দিকে তাকাই কিন্তু দেখি সব সিট বুকিং হয়ে গিয়েছে তাই বাধ্য হয়েই বসতে হয়।

কিছু দূরে যাওয়া পরে হঠাৎ বমি বমি ভাব হয়। মনে হয় যখন তখন বমি হয়ে যাবে। আমি এতো জার্নি করি তবুও কোনদিন বমি হয়না আজ হঠাৎ এমন লাগছে কেন? পলিথিনতো নিয়ে আসিনি। নিরাকে বললাম নিরা স্যারদের জিজ্ঞাসা করতো বাসে পলিথিন আছে নাকি!

নিরা স্যারদের না বলে ওই বান্দরকে বলছে, ভাইয়া একটু স্যারকে জিজ্ঞাসা করেন না পলিথিন আছে নাকি? আমার বান্ধবী বমি করতে পারে তাই একটু দরকার! বান্দর পোলাটা উঠে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে জার্নি করতে পারেননাতো এতো দূরের রাস্তায় এসেছেন কেন? আমি কিছু বলতে যাবো ওমনি সামনের দিকে চলে যায় কিছু সময় পরে বাস একটা স্টপেজ এ থামে।
-এইতো এখন ওষুধ নিয়ে এসে একটা একটা করিয়ে বুঝিয়ে দিলো।

-আগের কথা ভাবতে ভাবতে রাতের শেষের দিকে ঘুমিয়ে যাই, এই যে ম্যাম! এই যে শুনছেন! এরকম ডাক শুনে ঘুম ভেঙে গেলো, চোখ খুলেই দেখি সামির, হুহ! ডাকছেন কেন?
-ঘুমালেনতো ভালোই এখন উঠেন নামতে হবেতো! আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নাই এমনকি নিরাও নাই। কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম সবাই আমাকে ছেড়ে ঘুরতে গেলো নাকি!
-শোনেন ঘাবড়ানোর কিছু নাই ওই যে তাকান দেখেন সবাই আছে।
-তাকিয়ে দেখি সবাই আছে সাথে সাথে নেমে যেয়ে নিরাকে ঝাড়ি দিলাম কেন আমার একা রেখে নেমে আসছে।
-সামির ভাইয়া বাসের ভিতরে ছিলো তোকে একা রাখবো কেন? দেখলাম তুই সুন্দর ঘুমাচ্ছিস তাই আর ডাকিনি তাছাড়া এখনো তো কোথায় যাইনি শুধু গাড়ি থেকেই যা নেমেছি।
-হয়েছে আমাকে একা রেখে কোথাও কিন্তু যাবিনা।
-নাস্তা করে সবাই ঘুরতে বের হই।

-এই যে মিস্টার! এই যে মিস্টার! নাহ ডাক যেনো কানেই যাচ্ছে না!
-সামির পিছনে তাকাতেই বলি। কার সাথে কথা বলেন যে শুনছেনই না?
-আপনার শাশুড়ির সাথে মানে আমার মা।
-কি বললেন?
-না কিছু না, মা শুনো ঠিকমতো ওষুধ খেও টেনশন করোনা আমি ঠিক সময়ে বাসায় আসবো এখন রাখছি।
-আপনি আমাকে কি বললেন?
-যা শুনছেন তাই, আমি গেলাম স্যার মনে হয় ডাকছে।
-যাহ, কিছু বলতেই পারলাম না!
তবে ছেলেটাকে ভাল মনে হলেও দুষ্টুর হাড্ডি একটা।

হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হোঁচট খেয়ে পায়ে আঘাত পাই, আমার চিল্লানীর জন্য সব স্যার ম্যাম ইস্টুডেন্টের নজর আমার দিকে পড়ে। পা দিয়ে আর হাঁটতে পারিনা সবাই যখন আমার পা দেখানিয়ে ব্যস্ত! তখন দেখি সামির হাতে করে আইস নিয়ে এসে আমার পায়ে দিচ্ছে। এইটুকু সময়ে কইথেকে নিয়ে আসলো! বাইরে অবশ্যই অনেকগুলো দোকান আছে।

আমাকে নিয়েতো স্যাররা টেনশনে পড়লো কি করবে! আমি ভাল করে হাঁটতেই পারছিনা।

সামির বলে, নিরা তুমি হাত ধরে বর্ষাকে হাঁটাও ঠিক হয়ে যাবে আরও দুজন মিলে হাঁটানোর পরে একটু ভাল হয়। তারপর ওই পা নিয়েই আস্তে আস্তে সমুদ্র পাড়ে যাই। আমি এক পাশে বসে আছি। সবাই ছবি তুলা নিয়ে ব্যাস্ত আছে। আমি শুধু দেখছি, নিরাকে পাঠিয়ে দিলাম সবার সাথে মজা করতে আমি একাই থাকতে পারবো।

মা, বাবা সাথে কথা বলছিলাম অবশ্যই কাউকে কিছু জানাইনি জানালেই সব চিন্তা করবে।
-কি ব্যপার! আমার শ্বশুর, না শাশুড়ির সাথে কথা বলো?
-আমি কলটি কেটে বললাম কি বলেন!
-বললাম আজ কি বার?
-হুহ!
-হ্যাঁ, দেখি আপনার পা!
-কেন? কেন?
-এই যে ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে এসেছি লাগিয়ে দিলে তারাতারি ভাল হয়ে যাবে।
-আপনাকে ওষুধ আনতে বলছে কে??? আমি নেবোনা।
-পা দেখি এটা বলেই আমার পায়ে এসে ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছে আর বলছে পা ভাল না হলে সবাই বলবে সামিরের পা ভাঙা বউ, আমি এই অপবাদ শুনতে পারবোনা।
-কি বললেন? আমি আপনাকে বিয়ে করবো??
-হ্যাঁ, অবশ্যই আজ না কাল আমাকেই বিয়ে করতে হবে।
-রাগে কটমট করছি আপনাকে কোন মেয়েই বিয়ে করবে না আপনি একটা বান্দর পোলা।
- আপনি তাহলে বান্দরের বউ হবেন হিহিহি।
-কি বললেন?
-কচু, শুনেন ওই যে আমি গেলাম কেউ দেখলে মাইন্ড করবে আপনি ভাল করে লাগিয়ে নিয়েন।
-আজব! এই ছেলে হুটহাট করে আমাকে কি বলে গেলো? আর আমার জন্য এতো ভাবছে
কেন? আমাকে কি ইম্প্রেস করতে চায়?? যতই চেষ্টা করুক সেই আশা তার কখনোই পূরন হবে না।
-একটু পরে দেখি এক বড় ভাই এসে আমাকে কিছু চিপসের প্যাকেট দিচ্ছে।
-এগুলো কে দিলো! আমি নেবো কেন!
-নেন আপু বসে আছেন তাই খান, এমন সময় রাহাত স্যার এসে বললো বর্ষা বসে আছো এগুলো খাও।
-স্যার বলাতে এগুলো নিয়ে খাচ্ছিলাম, কেমন যেনো পানি পিপাসা লাগছে মনে হচ্ছে পানি
খেতে পারলে ভাল হতো। নিরারা সবাই অনেকটা দূরে চলে গিয়েছে কয়েকবার ডাকার পরে কেউ শুনলোনা। নিরুপায় হয়ে আনমনে পানি দেখছিলাম আর চিপস খাচ্ছিলাম। এমন সময় পিছন থেকে সামির বলে উঠে।
-বিয়ের পরে কিন্তু এসব খাবার খাওয়া যাবেনা। এইই অভ্যাসগুলো বাদ দিতে হবে, এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর বউ যেহেতু আজ হোক কাল হোক তুমিই হবে তাই এখন থেকেই তোমার খেয়াল রাখতে হবে। (তুমি করে বলা শুরু করেছে কখন জানিনা)
-আমি আপনার বউ কোনদিনও হবোনা, জীবনেও না। আমি এখন থেকে বেশী বেশী চিপস খাবো দেখবেন আপনি!
-আচ্ছা সে দেখা যাবে।
-সামির চলে যাচ্ছে সবার কাছে, আশেপাশে কাউকে না পেয়ে আস্তে করে ডাকলাম শুনছেন?
-পিছনে তাকিয়ে বলে হ্যাঁ বলো
-নিরাকে একটু ডেকে দিয়েনতো!
-কেন কিছু দরকার?
-হ্যাঁ আমার খুব পানি পিপাসা লেগেছে ওকে বলেন পানি এনে দিতে।
-ওই যে দেখেন আপনার পাশেই পানির বোতল রেখে এসেছি খেয়ে নিয়েন।
-পাশে তাকিয়ে দেখি আসলেই পানি আছে, কিছুটা তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
-হাত নেড়ে ইশারা করে বললো আমি মুখ লাগাইনি দেখেন এটা নতুন পানির বোতল। এটা বলেই সামনের দিকে হাটা শুরু করলো।
-প্রথম দিনের ঘটনা মনে পড়ে মনে মনে হাসতে থাকি।

বসে বসে ফেসবুকে কিছু সমুদ্রের ছবি আপলোড করলাম।
-একটা পিচ্চি মেয়ে এসে আমার হাতে একটা চিঠি আর ঝিনুকের মালা দেয়।
-তোমাকে কে দিয়েছে এগুলো!
-ওই যে ওই স্যার।
-তাকিয়ে দেখি সামির হাত দিয়ে ইশারা করছে বুঝাচ্ছে ও দিয়েছে, সাত পাঁচ না ভেবে চিঠিটা পড়তে থাকি,
"বর্ষা তোমায় প্রথম দিন রাগীময় চেহারা দেখেই প্রেমে পড়ে যাই। দ্বিতীয় ও রাগান্বিত রূপ, তৃতীয় লাজুক চাহনি, চতুর্থ লাজুক মুখ পঞ্চম হাসিময় মুখ। সব রকম রুপেই তোমার প্রেমে পড়ে যাই। তারপর থেকে তোমাকে নিয়মিত ফলো করে আসছি। এতোদিনে তোমাকে ভীষণ ভালবেসে ফেলেছি। হয়তো আমাকে তোমার ভাল নাও লাগতে পারে কিন্তু আমার মনে হলো তোমাকে ক্লিয়ার করে জানানো দরকার তাই জানিয়ে দিলাম। এখন সম্পূর্ণ তোমার মতামতের উপরে আমাদের সম্পর্কটা এগিয়ে যাবে। বিশ্বাস করো তোমায় খুব ভাল রাখবো আশা করি না করবে না।
ইতি,
সামির।
চিঠিটা পড়ে মাথায় পুরো গরম হয়ে আছে ইশারা করে কাছে ডাকলাম, আমার কাছে ডাকাতে সেতো খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে আসছে। ঈদের চেয়েও বেশী খুশি হয়েছে,
-এই পিচ্চি! তুমি মালাটা নিয়ে যাও, আমি পিচ্চি কে মালা দেওয়াতে সামির তাজ্জব হয়ে যায়। ওর দেওয়া প্রথম গিফট পিচ্চিকে দিয়ে দেওয়ায় কিছুটা আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা হয়।
-আমাকে ভালবাসেন? জানেন আমার পিছনে কত বুয়েটে পড়া মেডিকেলে পড়া পোলাপাইন ঘুরে তবুও পাত্তা দেইনা আর আপনি সেখানে এতো সাহস রাখলেন কই থেকে! আমাকে এতো কিছু সাহায্য করে আমাকে ইমপ্রেস করছেন? আবার এখন প্রপোজ করেও ফেললেন? বাহ ভালোই তো! আমার উত্তর শুনতে চেয়েছিলেন তাই না? এটা বলেই সামিরের মুখের সামনে চিটিটা টুকরো টুকরো করে ফেলি।
-আমার উত্তর পেয়েছেন তাহলে?
-মাথা নিচু করে সামির চলে যায়, দূর থেকে নিরা সব ফলো করেছে আমার কাছে এসেই বকা শুরু করলো তুই সামির ভাইকে বকা দিলি কেন? জানিস সামির ভাই তোকে কত ভালবাসে? তুই জানিস?
-আমাকে অনেক আগেই বলেছে কিন্তু তোকে বলার সাহস পাইনি তাই বলিনি। আমি নিরার উপরে রাগ করে বললাম আমাকে রুমে দিয়ে আয় আমার ভাল্লাগছে না।

-এর পর থেকে সামির আমার সামনে খুব কম এসেছে, দূর থেকে দেখতাম সব মেয়েরা সামির ভাই সামির ভাই বলে পাগল সবাই তার সাথে ছবি তুলা নিয়ে ব্যস্ত। সব মেয়েদের এরকম আচারণ দেখে একটু হিংসা হয়। মেয়েদের ওর সাথে কেন ছবি তুলতে হবে তা আবার গা ঘেঁষে ঘেঁষে! আচ্ছা আমি কেন রাগছি ও যা খুশি করতে পারে তাতে আমার রাগ করার তো কিছু নাই।

স্যারের কাছে অনুমতি নিয়ে, নিরাকে বললাম আমাকে রুমে দিয়ে আয়। এখানে থাকতে ভাল লাগছেনা আমি একটু রেস্ট নেবো। নিরা সাথে আরও দুটো বান্ধবী মিলে রুমে আসি।অল্প কিছু সময় পরেই লান্স টাইম তাই আর নিরারা সমুদ্র পাড়ে যায়নি আমার কাছেই থেকে যায়।

লান্স টাইমে সবাই কে দেখতে পারছি কিন্তু একবারও সামিরকে দেখতে পেলাম না। মনের অজান্তেই কেন জানি দুটি চোখ সামিরকে খুঁজছিলো। কেমন যেনো ভয় ভয় কাজ করছিল তখন সামিরকে রিফিউজ করেছি নিরার কাছে যা শুনলাম এটা যদি সত্যি হয় নিজের তো ক্ষতি করবে না! সামিরকে না দেখতে পেয়ে মনের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছে। নিরাকে বলেই ফেললাম নিরা তোর সামির ভাইকেতো দেখতে পারছিনা!
-নিরা কিছু বলার আগেই দেখি সামিরের বন্ধু ফোনে কথা বলছে, হ্যা আন্টি সামিরতো ঘুমাচ্ছে। ও উঠলে আমি কল দিতে বলবো।

-এখন ঘুমাচ্ছে কেন! এখন তো খাওয়ার সময়! আমার জন্য কি মন খারাপ নাকি! কিসের জন্য খেতে আসেনি!
-মামুন স্যার রনি ভাইকে বললো,
-এই রনি তুমি যেয়ে এই খাবার গুলো সামিরকে খাইয়ে আসো।
-ঠিক আছে স্যার।
-কিছুই মেলাতে পারছিনা, রনি ভাইয়া ফোনে কথা বললো সামির ঘুমিয়েছে! আর এখন স্যার বললো খাবার খাইয়ে দিয়ে আসতে, আসলে কি হয়েছে! কিছুই মাথায় আসছে না।
-নিরা এসে বললো জানিস কি হয়েছে?
-কি হয়েছে! নিরা!
-সামির ভাইয়া না স্রোতে ডুবে যাচ্ছিলো ওখানকার কিছু মানুষজন দেখেছিলো তাই বেঁচে গিয়েছে।
-কি বলিস! এসব! সামির এখন কেমন আছে?
-এখন ভাল আছে, তুই এতো অস্হীর হচ্ছিস কেন? তোর তো ভাল লাগার কথা। তোকে ডিস্টার্ব করছে তাই শাস্তি পেয়েছে।
-নিরা একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবিনা, তুই এখন আমাকে সামিরের কাছে নিয়ে যাবি। আমি সামিরের কাছে যাবো।
-দেখ বর্ষা! তোকে দেখে সামির ভাইয়ের কষ্ট লাগবে তুই তো ভাইকে পছন্দ করিসনা। তাই তোর না যাওয়া টাই ভাল।

-নিরা এখন সবাই খাচ্ছে এই সুযোগে চল দেখে আসি। তুই নিয়ে যাবি নাকি বল!
-ঠিক আছে চল
-রুমে সামনে যেয়ে দেখি রনি ভাই খাবার হাতে নিয়ে বের হচ্ছে, তার মানে সামির খাবার খায়নি। খাবার না খেলে তো শরীর ঠিক হবে না। তাই রনি ভাইয়ের কাছ থেকে খাবার গুলো নিয়ে রুমে গেলাম। সামির চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

- আমি খাবার পাশে রেখে দেওয়াতে হালকা একটা শব্দ হয় আর বলে উঠে রনি তোকে বললামতো কিছু খাবোনা এখন তবু যাসনি!
-আস্তে করে কপালে হাত রাখলাম, হাত রাখার সাথে সাথে চোখ মিলে তাকায়।
-তোমরা!
-হ্যাঁ আমরা
-এখানে কেন?
-নিরা বলে ভাইয়া কেমন আছেন?
-আগের চেয়ে বেটার, নিরা তোমরা এসেছো কেন?
-ভাইয়া বর্ষা আসতে চাইলো
-হয়েছে হয়েছে এতো ফরমালিটি কারও দেখাতে হবে না এটা বলতে বলতে সামির রুম থেকে বের হয়ে যায়।
-বর্ষা মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারেনা, বর্ষাতো মনের টানেই দেখতে এসেছিল তবুও সামির ফরমালিটি বললো কেন?
-এই নিরা কি ভাবছিস! চল এখান থেকে
-সত্যিই আমার খুব কান্না পাচ্ছে জীবনে সবার ভালোবাসা পেয়েছি কখনো অবহেলা পাইনি আজ সামিরের কাছে তা পেলাম। তাহলে আমি চিঠি ছিড়ে ফেলাতে সামিরও অনেক কষ্ট পেয়েছে।

-বর্ষা চল আর দেরি করিস না স্যার রা না দেখতে পারলে খুঁজবে তখন অনেক কৈফিয়ত দিতে হবে।
-হ্যাঁ চল যাই
- যেয়ে দেখলাম সামির ফোনে কথা বলছে মনে হয় মায়ের সাথে। কথা বলা শেষ হলেও আমার দিকে আর তাকায়নি। সামিরের এরকম এভয়েড আমার মনের মধ্যে অসহায় কাজ করছিল। একদম আর ভাল লাগছিলো না বাসায় চলে যেতে ইচ্ছে করছিল।

-বর্ষা তোর কি হয়েছে? দুপুর থেকে দেখছি মন খারাপ করে আছিস ঠিকমতো কথা বলছিস না। কি হয়েছে বলবি?

-নিরা আমার ভাল লাগছে না, সামির কথা বলছে না এভয়েড করছে।
-কেন তোর তো ভাল, তোকে কেউ আর ডিস্টার্ব করছে না।
-অন্য সময় হলে নিরাকে রাগ দেখাতাম কিন্তু এখন কিছু বলতে পারলাম না চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরলো।
-দেখ বর্ষা তুই একদম কাঁদবিনা তোর মন কি চায় তাই কর। তুই কি সামির ভাইকে ভালবাসিস!
-জানি না আমি তবে আগে দেখলে, কথা শুনলে রাগ হতো এখন ভাল লাগে কথা বলতে ইচ্ছে করে।

-আমি জানি তুই ভালোবাসিস। আচ্ছা চিন্তা করিস না আমি কথা বলবো ভাইয়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।

-কি ব্যপার নিরা তুমি আমাকে ডেকে নিয়ে আসলে কেন?
-বর্ষা আপনার সাথে কথা বলবে,এই বর্ষা কথা বল।
সামির বলে উঠে, কি বর্ষা আমার সাথে বলবে? কত বুয়েট, মেডিকেল ছেলেকে পিছনে ঘুরে! সেই মেয়ে আমার সাথে কথা বলবে! নিরা বলে, বর্ষা চুপ করে আছিস কেন? কথা বল।
-বর্ষা কি বলবে! মুখ দিয়ে যে কোন কথায় বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কথা বলার ভাষায় হারিয়ে ফেলছে। সামিরকে বলা সব কথায় সামির মনে রেখেছে তখন যে বর্ষা ছিলো এখন সেই বর্ষা নেই এটুকু বুঝছো না সামির! নাকি বুঝেও না বোঝার ভান করে আছো! এই কথাগুলো মনে মনে বলে ভেবে যাচ্ছে বর্ষা।
-দেখো নিরা তার কিছু বলার নাই আমি যাই ওকে! ভাইয়া শুনেন! ভাইয়া! নিরা ডাকতেই থাকে সামির তবুও চলে যায়। বর্ষা এইবার শব্দ করে কাঁদতে থাকে, নিরা বলে, বর্ষা তুই কাঁদিস না আমি সব ঠিক করে দেবো। ভাইয়া তোকে খুব ভালবাসে একটু অভিমান করে আছে তাই।
-হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস, ভ্রমণের সময় শেষ আজ রাতেই রওনা হবে।
-রাতে ডিনার করে সবাই কে বাসের কাছে যেতে বলেছে স্যার, আমি খেলাম না বাসে বমি করার ভয়ে আর কিছু খাইনি। আমি খাইনি জন্য নিরা আমার জন্য খাবার প্যাকেটিং করে নিয়ে এসেছে। বাসে উঠার আগে সামিরকে খুঁজলাম পেলাম না। কোথায় গিয়েছে! এখনো আসলো না কেন! সব ঠিক আছে তো! নিরা সিটে বসে আমাকে ডাকছে এই সিটে আয়। আমরা যে সিটে বসলাম তার সোজা অপসাইটে সামিরের বন্ধু বসে আছে একটা সিট খালি। তারমানে ওটা সামিরের জন্য কিন্তু সামির টাই কই গিয়েছে! দেখলাম সামিরকে কল দিয়ে বলছে ওই শালা তুই কই? তারাতারি আয় বাস ছেড়ে দিবে।
-কথা বলতে বলতে সামির এসে সিটে বসলো, একবার আমার সাথে চোখাচোখি হলো কিন্তু সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলো। আমিও জানালার পাশে বসে সেও জানালার পাশে বসে আছে।

বাস একটু দূরে যাওয়ার পরেই বমি শুরু হলো, আসার আগে কিছু খেলাম না তবুও বমি করছিলাম। আমার বমি দেখে বাসে অনেক মেয়েই বমি করলো। আসলে একজনের বমি দেখলে আর একজনেরও চলছে আসে। আমার বমি দেখে সামির এগিয়ে এসে নিরাকে বলে
বর্ষা বমির ওষুধ খায়নি?

-না ভাইয়া খায়নি নিরা অয়াক শুরু করে, নিরা তুমি আমার সিটে যাও আমি বর্ষাকে দেখছি। রাশেদ স্যার বলে উঠে কি ব্যপার সামির কি হয়েছে?
-স্যার বমি করছে আর কোন সমস্যা নাই চিন্তা করবেন না।

কখন যে সামির পাশে এসে বসেছে আমি জানি না। আমাকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলছে আমার পঁচা পাগলী নাও কুলি করে নাও।
-ভয়েস শুনেই চমকে উঠে তাকাই দেখি নিরা নেই সামির এসে বসেছে। একটা জিনিস লক্ষ্য করি আমার বমি দেখে মনে হচ্ছে সবাই একটু একটু ওয়াক করছে কেউ কেউ বমিই করে ফেলছে অথচ সামিরের মুখ দেখে মনে হচ্ছে বমি দেখে ওর কোন ঘৃণা নেই তবে আমার কষ্ট হচ্ছে জন্য ওর কষ্ট হচ্ছে। আমাকে বলছে খুব কষ্ট হচ্ছে পাগলী না?
একটু কেয়ারফুল হবে না? বমি বন্ধের টেবলেট খেয়ে উঠবে না?
-না মানে আপনি এখানে?
-হ্যাঁ আমি এখানে কোন সমস্যা?
-না মানে!
-আচ্ছা মানে মানে করতে হবে না তোমার বমি দেখেতো নিরার অবস্থা খারাপ! এখন কুলি করে ওষুধ খেয়ে নাও। আমি আছি আর কোন সমস্যা নাই আর খারাপ ব্যবহারের জন্য সরি।

-আমার তো ঈদের চেয়ে খুশি লাগছে, তবুও একটু অভিমান সুরে বললাম হোক আমার কষ্ট আমি কিছুই খাবো না । আমার কষ্ট হলে কারও কিছু যায় আসেনা।
-আমার যায় আসে বর্ষা তোমার কষ্ট হলে আমারও কষ্ট হয়।
-কষ্ট হলে আমাকে এভোয়েট করতেন না
-পাগলী তোমাকে এভোয়েট করে আমারও কষ্ট হয়েছে
-কচু
-হ্যাঁ কচু, এবার বাধ্য মেয়ের মত ওষুধ খেয়ে নাও আর ব্যাগ থেকে কমলা বের করে দিয়ে বলে এটা খেতে থাকো আর বমি হবে না।
-আপনি কমলা কই থেকে পেলেন?
-আমি জানতাম এরকম কিছু হবে তাই তো এটা কিনে আনতে শেষে বাসে উঠতে লেট হলো।

-সামিরের কেয়ারিং অন্য সবার থেকে আলাদা ওকে পাওয়া মানেই আমার ভাগ্য।ওর কেয়ারিং দেখে চোখে জল আসে এই ছেলেকে আমি কিভাবে রিজেক্ট করেছিলাম!

-এই পাগলী কাঁদছো কেন? কষ্ট হচ্ছে!
-না কিছু না একটু জ্বর জ্বর মনে হচ্ছে,
-আমার কপালে হাত দিয়ে বলে দেখি দেখি! হাত দিয়ে চমকে উঠে তোমার গায়ে তো জ্বর!
সাথে সাথে রুমাল বের করে ভিজিয়ে আমার কপালে দিয়ে বলে তুমি একটু ঘুমানোর চেষ্টা
করো ভাল লাগবে! আমার তো ঘুম পাচ্ছে না ইচ্ছা করছে সামিরের হাত ধরে ওর কাঁধে মাথা রাখি কিন্তু হাত ধরলে যদি কিছু মনে করে! না থাক

আমার মনের কথা হয়তো সামির বুঝতে পেরেছে ও নিজেই আমার হাত ধরে ইশারা করে
বলে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যেতে।
-মনে মনে হাসি আমার মনের কথাগুলো ছেলেটা বুঝে গিয়েছে, আজকে নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। আমার মত সুখী আর কেউ নাই শুধু একটা গান বলতে ইচ্ছে করছে "এই পথ যদি শেষ না হতো! তবে কেমন হতো তুমি বলতো!"

লেখক : উপমা পরি

এমএসএল