বিতর্কের আলোর ভুবনে


টাইমস ডেস্ক | Published: 2018-01-27 22:35:15 BdST | Updated: 2024-05-20 19:51:54 BdST

চারটি অন্তবিভাগ ও ৪৮টি দল নিয়ে প্রথম আন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি। নিয়মিত কর্মশালাও করে। লিখেছেন ও ছবি তুলেছেন মীর মাইনুল ইসলাম

মুস্তফা মুরাদ ইমরান তখন অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশবিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কের কোনো ক্লাব নেই, অথচ স্কুল-কলেজে বিতর্ক করেছেন সমান তালে। ফলে একটি সংগঠন গড়ে তোলার ইচ্ছা হলো খুব। ফলে ২০০৭ সালে তাঁর হাত ধরেই শুরু হলো মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (মাভাবিপ্রবিডিএস)। শুরুর সেই দিনগুলোর কথা এখনো মনে পড়ে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির, ‘সারা দিন ক্লাস করে, কোনো বিভাগের খালি ক্লাসরুম বা খোলা মাঠে বসে নানা বিষয়ে একে অন্যের সঙ্গে আলোচনা, যুক্তিতর্ক দিয়ে নিজেদের গড়ে তুলতাম। তখন আমরা কয়েকজন মাত্র ছিলাম।’ এত সমস্যার পরও উত্সাহের কমতি ছিল না কারো। ফলে ২০০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি দল নিয়ে প্রথমবারের মতো মাভাবিপ্রবি আন্ত বিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন তাঁরা।

সেবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংগঠন সাস্ট ডিবেটিং সোসাইটির আয়োজনে আন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায়ও গেল তাঁদের দল। এরপর নানা কারণে ক্লাবের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ল। কিন্তু ২০১২ ও ২০১৫ সালে দুই সভাপতি আসিফ বিন আসগর ও ফিরোজ শিকদারের উদ্যোগে ক্লাব নতুনভাবে জেগে উঠল। তাঁরা ১৩টি দল নিয়ে দ্বিতীয় ও ১৫টি দল নিয়ে তৃতীয় আন্ত বিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করলেন।

ক্লাবের এখন সভাপতি অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশবিজ্ঞানের মাস্টার্সের ছাত্র মোহাইমিনুল ইসলাম হিমু। গেল বছর তিনি চতুর্থ আন্ত বিভাগ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। এখানে অংশ নিয়েছে ১৫টি দল। সভাপতি জানালেন, ‘এই আয়োজনগুলোই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আমাদের ক্লাবকে ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন ১২০ জন সদস্য আছেন। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার দুই দিন দুই ঘণ্টার ক্লাস করি। পুরনোরা যেমন সেখানে তাঁদের যুক্তি ঝালিয়ে নেন, তেমনি নতুন তার্কিক তৈরি হয়।’ তেমনই একজন মেহেদী হাসান। কলেজজীবনে বিতর্ক করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তাঁর বিকাশ ঘটেছে। সে গল্পই বললেন সোসাইটির এই সাংগঠনিক সম্পাদক, ‘নিয়মিত কর্মশালা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিজেকে শাণিত করতে পেরেছি।’ এসব উদ্যোগের ফলে ক্লাবে গতি এসেছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে এর এক বা একাধিক দল অংশ নেয়। সাফল্যও বেড়েছে।

২০১৫-১৬ সালের ডাক, তথ্য-প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় তথ্য-প্রযুক্তি উত্সবে ময়মনসিংহ অঞ্চলের তাঁরা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। দলে ছিলেন হিমু, মেহেদী ও ইসাবেলা বীথি। প্রতিযোগিতায় সেরা তার্কিক হয়েছেন হিমু। ক্যাম্পাসেও তাঁরা বিতর্ককে আরো ছড়িয়ে দিয়েছেন। এ বছরের মে মাসে ৩২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮টি দলকে নিয়ে আয়োজন ‘এমবিএসটিউ আইভি—দ্য ইনসেপশন ২০১৭’-র আয়োজন করেছেন। ব্রিটিশ সংসদীয় ধারার এই বাংলা বিতর্কে সাস্ট স্কুল অব ডিবেট চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রসায়ন তৃতীয় বর্ষের সাদিয়া আনিসা ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা নিয়ে জানালেন, ‘আমরা পঞ্চম আন্ত বিভাগ ও দ্বিতীয় আন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চাই, কর্মশালাগুলো নিয়মিত হবে।’

ছাত্র-ছাত্রীদের এত কাজ ও সাফল্যে খুশি সোসাইটির উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সাংস্কৃতিক সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার চেষ্টা করি। ডিবেটিং সোসাইটি আমাদের অন্যতম সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাঁরা প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নিয়ে শুধু সাফল্যই আনছেন না, আমাদের সুনামও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম আন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছেন। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা কাটলে আমরা তাঁদের আরো সহযোগিতা করতে পারব। এই পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে তাঁরা আরো উত্সাহিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরো অর্জন ও সাফল্য নিয়ে আসতে পারবেন। এই বিতার্কিকদের আরো ভালো করার জন্য ক্যাফেটোরিয়ার নিচে একটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’ সূত্র: কালের কন্ঠ।

এসজে/ ২৭ জানুয়ারি ২০১৮