জীবন বাঁচাতে ‘লাইফ প্লাস’


টাইমস ডেস্ক | Published: 2018-01-27 22:37:59 BdST | Updated: 2024-05-20 20:50:13 BdST

আতিকুর রহমান ও রাশিক জামান মিলে তৈরি করেছেন রক্ত সংগ্রহের অ্যাপস, ক্যাম্পাস রেডিওর অ্যাপস। সেগুলো বেশ সাড়া ফেলেছে। তাঁদের দলটিও হয়েছে বড়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অ্যাপস নির্মাতাদের গল্প শোনাচ্ছেন স্বপ্নীল মাহফুজ।

ছোটবেলা থেকেই আতিকের বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ভালো লাগত। কেন বেলুন বাতাসে ওড়ে, প্রজাপতির পাখা কেন নড়ে—জানতে মন চাইত খুব। তবে লেখাপড়ায় যে খুব মনোযোগী ছিলেন, তা নয়। সারা দিন খেলে বেড়াতেন। তার পরও পরীক্ষার ফল ভালো হতো। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ১৩ ব্যাচের ছাত্র আতিকুর রহমান নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনায় পড়ছেন। একই ব্যাচের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসই) রাশিক জামানের সঙ্গে আলাপ ও বন্ধুত্ব হলো। দুজনেরই কোডিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে দক্ষ। চায়ের দোকানে রক্তের অ্যাপস বানানোর আইডিয়াটি রাশিককে বলতেই এক বাক্যে রাজি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে দুই বন্ধু নেমে গেলেন অ্যাপস বানাতে। দলের নাম দিলেন ‘ইকারুস’। তবে অন্যদের সঙ্গে তাঁদের পার্থক্য—তাঁরা রক্ত সংগ্রহে আগ্রহীদের নিয়ে একটি অ্যাপস তৈরি করতে নামলেন। তাঁদের ভাবনা ছিল, এই অ্যাপসটির মাধ্যমে আগ্রহী রক্ত গ্রহীতারা অ্যাপসের রক্তদাতাদের অবস্থান জানতে পারবেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসরে ছোটখাটো পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালালেন তাঁরা। কোডিংয়ের কাজ করতে লাগলেন রাশিক, ইন্টারফেস (কম্পিউটারের সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর প্রগ্রাম) তৈরি করতে লাগলেন আতিক। একসময় সব কাজ শেষও হলো। অ্যাপসের নাম রাখলেন ‘লাইফ প্লাস।’ গত বছরের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ টিম ইকোরাস তাদের প্রথম অ্যাপস ষরভব+ গুগল প্লে স্টোরে রিলিজ করে। দেখতে অন্য রক্তদানকারী অ্যাপসের মতো মনে হলেও একটু খোঁজাখুঁজি করলেই বিশেষ ফিচারগুলো চোখে পড়বে। সাধারণত অন্য অ্যাপসগুলোতে রক্তদাতার ঠিকানা দেওয়া থাকে। কোনো কারণে রক্তদাতা ঠিকানা বা ফোন নম্বর বদল করলে তাঁকে খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়। এখানেই লাইফ প্লাস আলাদা। ছয় ঘণ্টা পরপর এটি রক্তদাতার ঠিকানা আপডেট করে। ফলে রক্তদাতা ঠিকানা বদল করলেও তাঁকে খুঁজে পেতে কোনো সমস্যা হয় না। আতিক বললেন, ‘অ্যাপসটি মোবাইলে ইনস্টল করে ফেসবুকে লগইন করে ফোন নম্বর আর রক্তের গ্রুপ দিয়ে সার্চ দিলেই আপনা থেকেই রক্তদাতার রক্তের গ্রুপ অ্যাপসে সংযুক্ত হয়ে যাবে।’ আতিক বললেন, রক্তদাতাকে ‘অনুরোধ’ বা ‘ব্লাড রিকোয়েস্ট’ পাঠাতে হলে যেকোনো অ্যাপস ব্যবহারকারী রক্ত সংগ্রাহককে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্র ও রক্ত সংগ্রহের কারণ উল্লেখ করতে হবে। সেগুলো বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেই তিনি রক্তদানের জন্য যোগাযোগ করবেন। রাশিক জানালেন, লাইফ প্লাসের সবচেয়ে জরুরি ফিচারটি হলো, যেকোনো রক্ত সংগ্রহে আগ্রহী ব্যক্তি তাঁর রক্তের গ্রুপে সার্চ দিলে সবচেয়ে কাছে থাকা রক্তদাতাকে প্রথমে খুঁজে পাবেন। নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের ও তাঁর মধ্যে দূরত্ব ফুটে উঠবে। ‘রিকোয়েস্ট’ বা ‘অনুরোধ’ অপশনে ক্লিক করা মাত্র তাঁর মোবাইলে সেটি এসএমএস আকারে চলে যাবে। তাঁরা বললেন, ‘অনেক সাড়া পাচ্ছি আমরা। এর মধ্যেই ৭০০-রও বেশি রক্তদাতা আমাদের অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছেন। গুগল প্লে স্টোরে এটি ৪.৮ পয়েন্ট রেটিং পেয়েছে।’ life+-এর গুগল প্লে স্টোর লিংক হলো@‘https://goo.gl/Zz3Dgw’।

গুগল প্লে স্টোরে এটির এত সাড়া ফেলার খবর পুরো কুয়েটে চাউর হতে দেরি হয়নি। ফলে তাদের কুয়েট রেডিওতে আমন্ত্রণ জানানো হলো। শো শেষে কুয়েট রেডিওর প্রধান মৃম্ময় তুষার তাঁদের জন্যও অ্যাপস তৈরি করে দিতে অনুরোধ করলেন। কাজে নেমে গেলেন দুজনে। অনেকটুকু করেও ফেলেছেন, তখনই রাশিকের হার্ডডিস্ক ক্র্যাশ করল। ফলে পুরো কাজই ভেস্তে গেল। আবার কাজে নামলেন। ভালোভাবেই শেষ করতে পারলেন। ২৩ সেপ্টেম্বর কুয়েট দিবসে সেটি উদ্বোধন করলেন উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আলমগীর। তিনিও অ্যাপসটির প্রশংসা করলেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন রেডিওর সঙ্গে তুলনা করে দুই উদ্ভাবক বললেন, https://goo.gl/2scLHU—অ্যাপসটি বেশ সমৃদ্ধ। নানা সুবিধাও আছে। একবার ওপেন করে প্লে দিলেই চলতে থাকবে। অডিও, ভিডিওর ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার (ইন্টারনেটে অডিও বা ভিডিও সারাসরি দেখাকে লাইভ স্ট্রিমিং বলে) ক্ষমতা যেমন ভালো, তেমনি এটির মাধ্যমে আরজের কাছে এসএমএস পাঠানো যাবে। আগের অনুষ্ঠানগুলোও অ্যাপসে মোবাইলে ডাউনলোড করে শোনা যাবে। অ্যাপসের চ্যাটরুমের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শোনার পাশাপাশি শ্রোতারা একে অন্যের সঙ্গে আলাপ করতে পারবেন। চাইলে নোটিফিকেশন বার থেকেই লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করে দেওয়া যাবে। এ ছাড়া এটি পরের শোর নাম ও আরজে কে থাকছেন জানাবে।

ইকারুস এখন আর দুজনের দল নেই। সেখানে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য আরো চারজন যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা সবাই কুয়েটেই পড়েন। ১৩ ব্যাচের তিনজন—মুশফিকুর রহমান জয় (সিএসই), সায়েম হোসাইন (আইইএম [ডিপার্টমেন্ট অব ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট] ও সৌরিন বড়ুয়া (ডিপার্টমেন্ট অব ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং)। আর মুশফিক আবির পড়েন সিএসই ১৫ ব্যাচে। এত কষ্টে বানানো অ্যাপস দুটি তাঁরা বিনা মূল্যে গুগল প্লে স্টোরে দিয়েছেন। এখন এই দলের লক্ষ্য, বিশ্বমানের প্রযুক্তিপণ্য তৈরি করবেন।

ঘড়ির কাঁটা অনুসারে—মুশফিকুর রহমান জয়, মুশফিকুর রহমান আবির, আতিকুর রহমান, সায়েম হোসাইন, রাশিক জামান ও সৌরিন বড়ুয়া। ছবি : মৃম্ময় বাগচি

সূত্র: কালের কন্ঠ।

এসজে/ ২৭ জানুয়ারি ২০১৮