প্রবাসী মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ ও আইমানের ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ প্রাপ্তি


টাইমস ডেস্ক | Published: 2017-12-22 22:41:49 BdST | Updated: 2024-05-20 23:10:26 BdST

কেউ ব্যক্তিগত কারণে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি, দুর্ঘটনা কারো স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে, কেউ সাধারণ পরিবার থেকে এসেও অনেক বাধা সয়ে লড়ে গেছেন স্বপ্নের সঙ্গে। তাঁরা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র হিসেবে পেয়েছেন ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’। এসব অসাধারণ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর সাফল্যের গল্প নিয়ে লিখেছেন সাইফুল ইসলাম।

জন্ম তাঁর বিদেশে, সৌদি আরবের মাটিতে। তবে বাঙালি মা-বাবা চেয়েছিলেন খন্দকার মোহাম্মদ আইমান তাঁর জন্মভূমির রীতিনীতি শিখুক।

সে জন্য ক্লাস ফোরে পড়া ছোট্ট ছেলেটিকে বুকে পাথর বেঁধে মা দেশে স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। মায়ের আশা পূরণ করতে ভালো ছাত্রটি ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হলো। এসএসসি ও এইচএসসির ফলও দুর্দান্ত। দুটিতেই জিপিএ ৫! ইচ্ছা ছিল বুয়েটে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (সিএসই) পড়বেন। তবে সেটি হলো না। এরপর এআইইউবিতে (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ) ভর্তি হয়ে গেলেন পছন্দের বিভাগে। তিনি ওপেন ক্রেডিটের (যত ইচ্ছা ক্রেডিট নিতে পারবেন) ছাত্র ছিলেন।

প্রথম দিন ক্লাসরুম খুঁজে পাচ্ছিলেন না, তখন একটি ছাত্র বলে উঠল, ‘তুমি আমাদের সঙ্গে ভর্তি হয়েছ? চলো, আমিও ক্লাসে যাব।’ সেই থেকে নাইমুল খায়ের প্রীতমের সঙ্গে বন্ধুত্ব। এখনো সেটি অটুট আছে। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে এক আত্মীয়ের বাসায় থেকে পড়েছেন আইমান। সৌদি আরবে তেমন যানজট নেই, ক্যাডেট কলেজের জীবনেও সেটির দেখা পাননি, তবে ঢাকায় এসে গাড়ির ভিড় ঠেলে সকালের ক্লাসে যাওয়াই দায়। ফলে ‘এ প্লাস’ পাবেন কি না সে টেনশনেই তাঁর মাথা খারাপ হয়ে যেত।

এআইইউবিতে আবার ৯০ শতাংশ নম্বরে এই মার্কস দেওয়া হয়। তার পরও মন দিয়ে পড়ে প্রথম সেমিস্টারে জিপিএ চারের মধ্যে ‘চার’ পেলেন। এরপর থেকে সব সেমিস্টারে এই ফল ধরে রেখেছেন তিনি। ১২ সেমিস্টারে আইমানের ক্রেডিট ছিল ১৪৮! ভালো ছাত্রটি তাঁর ফলের গর্বে হেসে দিলেন। বললেন, ‘প্রতিটি ক্লাসের মধ্যে আমাদের দুই থেকে তিন ঘণ্টার ব্রেক থাকত। তখন বন্ধুরা মিলে আশপাশে বেড়াতাম। এভাবেই ঢাকা চিনেছি। যখন মা-বাবা ছুটিতে ঢাকায় আসতেন, তাঁদের নিয়ে বেড়াতাম। খুব ভালো লাগত।’ সেরা ছাত্র হিসেবে চ্যান্সেলর অ্যাওয়ার্ড নেওয়ার খবরটিও বাবাকে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে পারেননি আইমান। অনুষ্ঠানে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। তবে পরে যখন মায়ের হাতে অ্যাওয়ার্ডটি তুলে দিলেন, ছেলের গর্বে প্রবাসী মা চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না।

টিআই/ ২২ ডিসেম্বর ২০১৭