ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট উত্তোলন পদ্ধতি


ঢাবি টাইমস | Published: 2018-04-28 10:39:40 BdST | Updated: 2024-05-20 23:31:27 BdST

বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে অনার্স এবং মাস্টার্স এর রেজাল্ট বের হচ্ছে। রেজাল্ট বের হবার সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলা, তা হল সার্টিফিকেট তোলা। এর জন্য রেজিস্টার বিল্ডিং ঘুরে ঘুরে হয়রান হতে হয় অনেককেই। অনেকেই বিষয়টা নিয়ে কনফিউজড। তাই এখানে পুরো প্রক্রিয়াটা বলে দিচ্ছি। প্রস্তুতি নিয়ে গেলে বারবার ঘুরাঘুরি করতে হবে না।

সার্টিফিকেট উঠানোর জন্য দরকারী ডকুমেন্ট:
১. একদম শেষ যে পরীক্ষাটা দিয়েছেন, তার প্রবেশপত্র।
অনার্সের ক্ষেত্রে- ৮ম সিমেস্টার/ফোর্থ ইয়ার ফাইনালের প্রবেশপত্র। (না থাকলে ফাইনাল ইয়ারে ভর্তির পে-ইন স্লিপ, যাকে আপনারা Pain Slip বলেন আরকি)
মাস্টার্সের ক্ষেত্রে- সেকেন্ড সেমিস্টার/ ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার প্রবেশপত্র। (না থাকলে মাস্টার্সে ভর্তির পে-ইন স্লিপ)
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র।
৩. লাইব্রেরি কার্ড (যদি করিয়ে থাকেন/হল থেকে দিয়ে থাকে)
উত্তোলন প্রক্রিয়া

১. ফর্ম সংগ্রহ:
কোন একটা শুভদিন দেখে সারাদিন সময় হাতে নিয়ে সকাল সকাল চলে যাবেন রেজিস্টার বিল্ডিং এর ৩১০ নম্বর রুমে। সেখান থেকে ১৫/- টাকা দিয়ে ফর্ম কিনবেন। (অনার্স এবং মাস্টার্স এর সার্টিফিকেট একসাথে উঠালে দুটো আলাদা ফর্ম কিনবেন।)

২. ফর্ম ফিল-আপ:
ঠান্ডা মাথায় সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ফর্মে একটা বক্স আছে ‘মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ পর্ব পরীক্ষার্থীর ষ্কেত্রে...’ এমন কিছু লেখা। অনার্সের রেজাল্ট আসতে আসতে অনেক দিপার্টমেন্টের মাস্টার্স এর ফার্স্ট সেমিস্টার পরীক্ষা হয়ে যায়। সেসময় অনার্সের সার্টিফিকেট তোলার ক্ষেত্রে মাস্টার্স ফার্স্ট সেমিস্টার পরীক্ষা যদি হয়ে থাকে কেবলমাত্র সেক্ষেত্রেই এই বক্সটির যাবতীয় তথ্য পূরণ করবেন। নাহলে ফাঁকা রেখে দেবেন।

যারা শুধু মাস্টার্স কিংবা অনার্স এবং মাস্টার্স এর সার্টিফিকেট একসাথে তুলবেন, তারা এই বক্সটা ফাঁকা রেখে দেবেন।
ফর্মের নিচে ছবির বক্সে এক কপি রিসেন্ট পাসপোর্ট সাইজের ছবি গাম দিয়ে পেস্ট করবেন। উল্লেখ্য যে, এখানে কোন ডকুমেন্টই সত্যায়নের কোন ঝামেলা নেই কেননা আপনার হল প্রভোস্টের সিগনেচারই সত্যায়নের কাজ করবে।

৩. হল থেকে স্লিপ নেয়া:
সব তথ্য পূরণ করা হয়ে গেলে ফর্মটি নিয়ে চলে যাবেন হল অফিসে। হলের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করার জন্য হল থেকে একটা স্লিপ দেবে। সেটা নিয়ে ব্যাংকে যেতে হবে। (এখনই ব্যাংকে দৌড় দেবেন না, তার আগে কিছু কাজ আছে।)

৪. হলের সিট কাটানো:
এই ধাপটা শুধুমাত্র আবাসিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আপনি হলে আবাসিক হয়ে থাকলে আপনার ফর্মের পেছনে একটা সিল দেয়া হবে। তাতে ‘সিট প্রদানের তারিখ’ (অনার্স এবং মাস্টার্স উভয় ক্ষেত্রে) এবং ‘সিট বাতিলের তারিখ’ (মাস্টার্সের ক্ষেত্রে) লিখে দেবে হল থেকে। সিলটা দেয়া হল কিনা খেয়াল করবেন। এবার ফর্ম এবং হল থেকে দেয়া স্লিপটা নিয়ে চলে যাবেন রেজিস্টার বিল্ডিং এর ১২৪ নম্বর রুমে। সেখান থেকে আপনার ফর্মে সিল মেরে এই মর্মে সিগনেচার করে দেয়া হবে যে ‘বকেয়া পাওনা পরিশোধিত।’

৫. সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর ক্লিয়ারেন্স:
এবারে যাবেন সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর পেছনে যেখানে পুরনো পত্রিকার সংগ্রহশালা, সেখানে। ঠিক সেখানে না, তার আগেই দেখবেন গ্রিল দেয়া একটা কাউন্টারে একজন বুড়ো চাচা বসে থাকেন। তার কাছে ফর্মটা দেবেন। লাইব্রেরী থেকে কোন বই নিয়ে থাকলে সেটা জমা দেবেন। মাস্টার্স এর ক্ষেত্রে লাইব্রেরী কার্ড (করিয়ে থাকলে/হল থেকে দিয়ে থাকলে) তার কাছে জমা দেবেন। তাহলে তিনি আপনার ফর্মে এই মর্মে সিল মেরে দেবেন যে ‘কোন বই পাওনা নাই।’ এবার সেন্ট্রাল লাইব্রেরির মূল গেটে ঢুকে ইনফরমেশন বুথ থেকে ঐ সিলের ওপর একটা সিগনেচার করিয়ে নেবেন।

৬. হলের টাকা জমা দেয়া:
এবার চলে যাবেন টিএসসির জনতা ব্যাংকে। আপনার হল থেকে যে স্লিপটা দিয়েছে, সেটা ঠিকভাবে পূরণ করে আপনার হলের কাউন্টারে টাকা জমা করবেন। এই টাকার পরিমানটা হলভেদে এবং আবাসিক/অনাবাসিক ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। স্লিপ এব ফর্ম দুটোতেই ‘নগদ গ্রহন’ এর সিল নিয়ে নেবেন ঠিকভাবে।

৭. প্রভোস্টের সিগনেচার সংগ্রহ:
টাকা জমা হয়ে গেলে আবার চলে যাবেন হলে। শেষ যে পরীক্ষাটা দিয়েছেন, তার প্রবেশপত্রের ফটোকপি (না থাকলে শেষ বর্ষে ভর্তির পে-ইন স্লিপ এর ফটোকপি) ফর্মের সাথে অ্যাটাচ করে হল অফিসে জমা দিন প্রভোস্ট এর সিগনেচার নেবার জন্য। মাস্টার্সের সার্টিফিকেট তুলতে গেলে এই ধাপে আপনার আইডি কার্ডও জমা নিয়ে নিতে পারে। (অর্থাৎ অফিসিয়ালি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র/ছাত্রী হয়ে যাবেন আরকি, এরপর থেকে ফুল ভাড়া দিয়ে বাসে যাতায়াত করবেন :P )

৮. টাকার অ্যামাউন্ট লিখিয়ে নেয়া:
প্রভোস্ট এর সিগনেচার করা হয়ে গেলে ফর্মটা নিয়ে চলে যাবেন রেজিস্টার বিল্ডিং এর ৩০৯ নম্বর রুমে। সেখানকার কাউন্টার থেকে ফর্মের ওপর টাকার পরিমান লিখিয়ে নেবেন। অনার্স এবং মাস্টার্স উভয় ক্ষেত্রেই নরমাল ফিস ২০০/- টাকা (সার্টিফিকেট পেতে ৭ কার্যদিবস কিংবা ততোধিক সময় লাগে।) এবং ইমারজেন্সি ফিস ৪৫০/- টাকা (তিন কার্যদিবসের মধ্যে সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন)। কাউন্টারে বললে আপনার চাহিদা অনুযায়ী নরমাল/ইমারজেন্সি ফিস লিখে দেবে।

৯. সার্টিফিকেটের টাকা জমা:
আবারও যাবেন টিএসসির জনতা ব্যাংকে। এবার হলুদ স্লিপ সংগ্রহ করবেন। তাতে আপনার ফর্মে লেখা নির্দিষ্ট টাকার অ্যামাউন্টসহ সব তথ্য ঠিকভাবে পূরণ করবেন। স্পষ্ট করে লিখবেন ...সার্টিফিকেট (স্নাতক/স্নাতকোত্তর) উত্তোলন ফিস বাবদ....(আজকাল অনেক বাঙালিদের ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয়। নাহলে আবার তারা খেতে গিয়েও জট পাকিয়ে ফেলেন)...স্লিপটা ঠিকভাবে লিখে ১ অথবা ২ নম্বর কাউন্টারে টাকা জমা দিন। (হলের কাউন্টার নয়, অবশ্যই ১ অথবা ২ নম্বর কাউন্টার)

১০. ফর্ম জমা দেয়া:
এবার ব্যাংকের হলুদ স্লিপ এবং মূল ফর্ম নিয়ে আবার চলে যাবেন রেজিস্টার বিল্ডিং এর ৩০৯ নম্বর রুমে। সেখানে গিয়ে ফর্মটা জমা দিলে কাউন্টার থেকে আপনার হলুদ স্লিপের পেছনে তারিখ লিখে দেবে। স্পষ্ট করে শুনে নেবেন সার্টিফিকেট তুলতে কবে যাবেন। এবার স্লিপটা নিয়ে বাসায়/হলে চলে যান। গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুম দেন।

সার্টিফিকেট তোলা:
কাউন্টার থেকে বলে দেয়া নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে ঐ কাউন্টারেই আপনার হলুদ স্লিপটি জমা দিয়ে আপনার চার/পাঁচ বছরের সাধনায় পাওয়া সার্টিফিকেটটি উঠিয়ে নিন। সার্টিফিকেট তোলার সময় আপনার শেষ পরীক্ষাটির প্রবেশপত্র (না থাকলে শেষ বর্ষে ভর্তির পে-ইন স্লিপ) মূল কপিটি দেখাতে হতে পারে। সেটা ঐ সময়ে কাউন্টারে বসা ব্যক্তির মুডের ওপর নির্ভর করে।
অভিনন্দন, এখন, এই মূহুর্তে আপনি বন্ধুবান্ধবদের জন্য একটা ট্রিটের ব্যবস্থা করুন।

সুতরাং, পুরো প্রক্রিয়াটায় আপনার যাত্রা পথ দাঁড়ায় নিম্নরূপ:
রেজিস্টার বিল্ডিং ৩১০> হল অফিস> রেজিস্টার বিল্ডিং ১২৪ (শুধু আবাসিকদের জন্য, অনাবাসিকদের এই ধাপ দরকার নাই)> সেন্ট্রাল লাইব্রেরী> ব্যাংক> হল> (প্রভোস্টের সাইন নিয়ে) রেজিস্টার বিল্ডিং ৩০৯> ব্যাংক> রেজিস্টার বিল্ডিং ৩০৯(জমা দিয়ে বাড়ি যান, যেদিন আসতে বলবে, সেদিন এসে সার্টিফিকেট নিয়ে যাবেন)
ওহ হ্যাঁ, এটা কিন্তু আপনার সাময়িক সার্টিফিকেট। কনভোকেশন পর্যন্ত এই সার্টিফিকেট দিয়ে কাজ চালাতে পারবেন। মূল সার্টিফিকেট পেতে হলে কনভোকেশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কনভোকেশন হয়ে গেলে সিমিলার প্রসেস অনুসরন করে আপনার আসল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
রেজিস্টার বিল্ডিং এর ৩০৯ নম্বর রুমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলার এবং ইভিনিং মিলিয়ে সবগুলো ইন্সটিটিউটের সবগুলো ডিপার্টমেন্ট ছাড়াও অধিভুক্ত ১০৫টি সরকারী কলেজ, সরকারী এবং বেসরকারী মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজের সার্টিফিকেট বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সুতরাং, এই রুমে যতবার যাবেন, সময় নিয়ে যাবেন। ফাঁকা পেলে আপনার ভাগ্য ভালো, নাহলে লাইনে দাঁড়াতে হবে। তাই কোন সরকারী নিয়োগ পরীক্ষার আগে কিংবা কোনভোকেশনের পরপর সময়টাতে না গিয়ে অফ সিজনে গিয়ে ফাঁকা কাউন্টার থেকে সার্টিফিকেট তুলে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

লিখেছেনঃ শিফাত হাসান/বিদিবিএস